গ্রামীণ দু:স্থ পরিবারসমূহের দৈনন্দিন খাদ্য চাহিদা পূরণে সহায়তা করা
ভূমিকাঃ
ভিজিডি কর্মসূচি মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আওতায় বাংলাদেশের গ্রামীণ দুঃস্থ মহিলাদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে বাস্তবায়িত একটি অন্যতম সামাজিক নিরাপত্তামূলক কর্মসূচি, যা সম্পূর্ণরূপে আর্থ-সামাজিকভাবে দুঃস্থ পরিবার বিশেষত: মহিলাদের জীবনমান উন্নয়নে কাজ করে। অতি দরিদ্র মহিলাদের উন্নয়ন স্থায়ীত্বের জন্য এই কর্মসূচির আওতায় প্রতি ২ (দুই) বছর মেয়দী ভিজিডি চক্রে সারাদেশ ব্যাপী ১০,৪০,০০০ (দশ লক্ষ চল্লিশ হাজার) জন দুঃস্থ মহিলা মাসিক ৩০ কেজির বস্তাজাত খাদ্য (চাল) সাহায্যের পাশাপাশি উন্নয়ন প্যাকেজ সেবার আওতায় নির্বাচিত এনজিও’র মাধ্যমে জীবনদক্ষতা উন্নয়নমূলক প্রশিক্ষণ এবং আয়বর্ধকমূলক প্রশিক্ষণ পেয়ে থাকে। তাছাড়া, উপকারভোগীগণ সঞ্চয় ব্যবস্থাপনার আওতায় প্রতি মাসে ২০০/- টাকা সঞ্চয় জমা করে থাকে, যা ক্ষুদ্র ব্যবসা পরিচালনার জন্য প্রারম্ভিক মূলধন গঠন হিসেবে কাজ করে। ২০০১-২০০৮ পর্যন্ত জিওবি ও বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির যৌথ সহযোগিতায় ভিজিডি উপকারভোগীদের খাদ্য ও প্রশিক্ষণ সহায়তা প্রদান করা হয়। ২০০৯-২০১০ চক্র হতে ভিজিডি কার্যক্রম এককভাবে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বর্তমানে ৬৪ টি জেলার ৪৯ ২টি উপজেলার ৪৫৭২ টি ইউনিয়নে পরিচালিত হচ্ছে।
কর্মসূচির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য:
লক্ষ্যঃ বাংলাদেশের দারিদ্র পীড়িত এবং দুঃস্থ গ্রামীণ মহিলাদের আর্থ-সামাজিক অবস্থার ইতিবাচক উন্নয়ন করা, যাতে তারা বিদ্যমান খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা এবং নিম্ন সামাজিক মর্যাদার অবস্থানকে সফলভাবে অতিক্রম করে চরম দারিদ্র স্তরের উপরের অবস্থানে/স্তরে টিকে থাকার সক্ষমতা অর্জন করতে পারে।
উদ্দেশ্য: গ্রামীণ দু:স্থ পরিবারসমূহের দৈনন্দিন খাদ্য চাহিদা পূরণে সহায়তা করা এবং বিপণনযোগ্য দক্ষতা বৃদ্ধিকল্পে প্রশিক্ষণের সুযোগ সৃষ্টি করা, সঞ্চয়ের মাধ্যমে বিনিয়োগের প্রারম্ভিক মূলধন সংগ্রহের জন্য উৎসাহিত করা, ঋণ প্রাপ্তিতে সুযোগ প্রদানের মাধ্যমে উপার্জনক্ষম করে গড়ে তোলা এবং চলমান উন্নয়ন কর্মসূচি গুলোতে অন্তর্ভুক্তিকরণের জন্য যোগ্য করে গড়ে তোলা।
বাজেট বরাদ্দঃ ২০২০-২০২১ অর্থ বছরে সংশোধিত বাজেটে খাদ্য বরাদ্দ, পরিবহণ ব্যয়, ব্যবস্থাপনা ব্যয়, আপ্যায়ন ব্যয়, অন্যান্য ব্যয় এবং উন্নয়ন প্যাকেজ সেবার আওতায় প্রশিক্ষণ ব্যয় বাবদ ভিজিডি খাতে মোট ১৮৪০০৫.২৯ (এক হাজার আটশত চল্লিশ কোটি পাঁচ লক্ষ ঊনত্রিশ হাজার) লক্ষ টাকা বরাদ্দ পাওয়া যায় এবং সর্বমোট ব্যয় ১৮৩৯২৯.২৫ (এক হাজার আটশত ঊনচল্লিশ কোটি ঊনত্রিশ লক্ষ পঁচিশ হাজার) লক্ষ টাকা।
খাদ্য সহায়তাঃ ২০১৯-২০২০ ভিজিডি চক্রের আওতায় ২০২০-২০২১ অর্থবছরে ১০,৪০,০০০ (দশ লক্ষ চল্লিশ হাজার) জন ভিজিডি উপকারভোগী মহিলাকে মাসিক ৩০ কেজি হারে ৩,৭৪,৪০০ মেঃটন চাল বিতরন করা হয়েছে এবং নির্বাচিত ৪৫৬টি এনজিও’র মাধ্যমে আয়বর্ধক ও দক্ষতা উন্নয়নমূলক প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে।
প্রশিক্ষণঃ
ভিজিডি কর্মসূচির আওতায় গ্রামীণ দরিদ্র মহিলাদের ০৯টি মডিউলের মাধ্যমে জীবন দক্ষতা ও জীবিকা নির্বাহভিত্তিক প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়, যার মাধ্যমে উপকারভোগীদেরকে একদিকে যেমন সামাজিকভাবে সচেতন করা হচ্ছে, অন্যদিকে এই নারীদের ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তোলার জন্য উৎপাদনমুখী কর্মকান্ডে সম্পৃক্ত করা হচ্ছে।
ক) জীবন দক্ষতা উন্নয়নমূলক প্রশিক্ষণঃ আয় রোজগারের জন্য যেমন দক্ষতা লাগে, তেমনি জীবন ও পরিবেশ পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে চলার জন্য নানাবিধ জ্ঞান ও দক্ষতার প্রয়োজন হয়; যাকে জীবন দক্ষতা বলে অভিহিত করা হয়। উপকারভোগী মহিলাদের প্রশিক্ষণ প্রদানের জন্য নির্বাচিত ও চুক্তিবদ্ধ এনজিও মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর কর্তৃক সরবরাহকৃত প্রশিক্ষণ মডিউল অনুযায়ী ভিজিডি উপকারভোগী মহিলাদের সচেতনতা বৃদ্ধিমূলক প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। নির্বাচিত প্রত্যেক ভিজিডি উপকারভোগী মহিলা (১০০%) ২ (দুই) বৎসর মেয়াদী ভিজিডি চক্রে ৪৬ ঘন্টার (১৩ দিন) আনুষ্ঠানিক সচেতনতা বৃদ্ধিমূলক মৌলিক প্রশিক্ষণ এবং ১৭.৩০ ঘন্টার (৭দিন) রিফ্রেশার্স প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে থাকে। জীবন দক্ষতা উন্নয়নমূলক প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্য হচ্ছে অতি দরিদ্র ও দরিদ্র মহিলাদের জীবন-জীবিকার মান উন্নয়ন করা। মৌলিক প্রশিক্ষণে বিভিন্ন বিষয়ের উপর সচেতন করা হয়, যা দৃষ্টিভঙ্গি এবং আচরণ পরিবর্তন ও প্রাত্যহিক জীবনে তার প্রয়োগ ঘটাতে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করে থাকে। জীবন দক্ষতা প্রশিক্ষণের বিষয়ঃ ১) ভিজিডি কর্মসূচি, ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য ও পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা ২) দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ৩) মা ও শিশু স্বাস্থ্য, খাদ্য ও পুষ্টি ৪) নারীর ক্ষমতায়ন ৫) এইচআইভি/এইডস এবং মাদক ও তামাকজাত দ্রব্যের প্রভাব।
খ) আয় বৃদ্ধিমূলক দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ: আয় বৃদ্ধিমূলক দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্য হলো ভিজিডি উপকারভোগী মহিলাদের দক্ষতা উন্নয়নের জন্য চুক্তিবদ্ধ এনজিও’র মাধ্যমে প্রশিক্ষণ প্রদান করা। নির্বাচিত প্রত্যেক ভিজিডি উপকারভোগী মহিলা (১০০%) প্রথমে কমপক্ষে ৪২ ঘন্টার আনুষ্ঠানিক মৌলিক প্রশিক্ষণ এবং দ্বিতীয় পর্যায়ে ফলোআপ হিসেবে ২১ ঘন্টার রিফ্রেশার্স প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে থাকে। আয় বৃদ্ধিমূলক দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণের মাধ্যমে অতি দরিদ্র ও দরিদ্র মহিলাদের আয়বৃদ্ধিমূলক কর্মসূচির সাথে সম্পৃক্ত করে তাদের জীবন-জীবিকার মান উন্নয়ন ও আত্মনির্ভরশীল করে গড়ে তোলা। এতদ্ব্যতীত ভিজিডি উপকারভোগী মহিলাগণ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে উদ্যোক্তা উন্নয়ন ও ব্যবসা ব্যবস্থাপনাসহ নির্দিষ্ট আয় বৃদ্ধিমূলক কাজের উপর ধারণা পেয়ে থাকে এবং নিজস্ব দক্ষতা/চাহিদার ভিত্তিতে একটি ব্যবসা পরিকল্পনা করে থাকে। প্রশিক্ষণের বিষয়ঃ ১) উদ্যোক্তা উন্নয়ন ২) দেশী মুরগী ও হাঁস পালন ৩) বাড়ীর পাশে সবজী চাষ ৪) গরু ও ছাগল পালন।www.dwavgd.gov.bd
সঞ্চয়ঃ ভিজিডি উপকারভোগী মহিলাগণ সঞ্চয় ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমের আওতায় মাসে ২০০/- টাকা হারে তাদের নিজস্ব একাউন্টে সঞ্চয় জমা রাখে, যা ক্ষুদ্র ব্যবসা পরিচালনায় প্রারম্ভিক মূলধন হিসেবে কাজ করে।
ভিজিডি কর্মসূচির আওতায় রাইস ফর্টিফিকেশন কার্যক্রমঃ
বিশ্বখাদ্য কর্মসূচির কারিগরী সহযোগিতায় সর্বপ্রথম কুড়িগ্রাম জেলার সদর উপজেলায় পাইলট কার্যক্রম হিসেবে ভিজিডি উপকারভোগী মহিলাদের অনুকূলে রাইস ফর্টিফিকেশন কার্যক্রম শুরু হয়, যা ধাপে ধাপে বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমানে সারাদেশে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় কর্তৃক ১৭০টি ও বিশ্বখাদ্য কর্মসূচির সহযোগিতায় ১৯টিসহ সর্বমোট ১৮৯টি উপজেলায় সম্প্রসারিত হয়েছে। এই কার্যক্রমের মাধ্যমে ভিজিডি উপকারভোগী মহিলাদের পুষ্টির অভাব দূর করার জন্য পাইলট কার্যক্রম হিসেবে বর্তমানে সাধারণ চালের সাথে ০৬টি মাইক্রো নিউট্রেন্ট (ভিটামিন এ, বি১, বি১২, আয়রন, ফলিক এসিড, জিংক) মিশ্রণপূর্বক পুষ্টিচাল প্রস্তত করে (ফর্টিফাইড রাইস) বিতরণ করা হচ্ছে। রাইস ফর্টিফিকেশন কার্যক্রমের মাধ্যমে ভিজিডি কার্ডধারী মহিলার পরিবারসমূহের সদস্যবৃন্দ তথা মহিলা, শিশু ও বয়স্কদের অভাবজনিত অপুষ্টির উপাদানের পরিমাণ কমে আসবে।