মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস

 





মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস

১.  পটভূমি


 আমাদের জাতীয় ইতিহাসে হলো একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ এই মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে জন্মলাভ করে স্বাধীনতার সার্বভৌম বাংলাদেশ

 পাকিস্তান নামের রাষ্ট্র গঠনের প্রস্তাব করা হয় ১২ ই আগস্ট প্রকাশিত চাটখিলে দিয়া দে পূর্ববঙ্গ ও পশ্চিমবঙ্গের মধ্যে সীমানা আনুষ্ঠানিকভাবে নির্ধারিত হয় পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার ১৯৪৭ সালের ১৪ ই আগস্ট পূর্ববাংলা হয় পাকিস্তানের অংশ পূর্ব পাকিস্তান থেকে জনগণ আশা করেছিলেন এবার তাদের আশা আকাঙ্ক্ষা পূরণ হবে তাদের প্রত্যাশিত স্বাধীনতার নতুন রাষ্ট্রপতি উচিত হবে উন্নত জীবনের অধিকারী হবে কিছুদিনের মধ্যেই পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ অনুভব করলেন তাদের প্রত্যাশা পূরণ হওয়ার নয় পাকিস্তানের শাসন বর্গ বহুবাচনিক সমাজের পূর্বপরিকল্পিত ঐক্যবদ্ধ সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠার ষড়যন্ত্র করেছে রাজনৈতিক ক্ষেত্রে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ অংশগ্রহণ ক্ষেত্রে সংকুচিত করা হচ্ছে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে তারা বঞ্চনার শিকার হয়েছেন এমনকি পূর্ব পাকিস্তানের সম্পদে পশ্চিম পাকিস্তানের উন্নয়ন নিশ্চিত করার ব্যবস্থা করা হয়েছে।


মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস

 এভাবে পূর্ব পাকিস্তান স্বাধীনতা সংগ্রামের পটভূমি তৈরি হয় হাজার ১৯৫২ সালে নিজস্ব ভাষা অধিকার রক্ষার জন্য জীবন দান করতে হয় পূর্ব পাকিস্তানের ছাত্র-জনতার ১৯৫৮ সালের জেনারেল আইয়ুব খান সামরিক শাসন জারি করে ক্ষমতা দখল করেন ১৯৬৬ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেইখ মুজিবুর রহমান বাঙালির স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে ছয় দফা দাবি পেশ করেন ছয় দফা নিয়ে পাকিস্তানের ১৯৭২ সালের ৭ ডিসেম্বর সর্বপ্রথম অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে পূর্ব পাকিস্তান রাজনৈতিক দলের সংখ্যা গোলাপ করে আওয়ামী লীগ পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদ সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসেবে তার উত্তর প্রদেশ জনগণ প্রত্যাশা করেছিলেন নির্বাচিত রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে পূর্ব পাকিস্তানের শাসন বর্গ কিছু রাজনৈতিক নেতা এবং কিছু সামরিক কর্মকর্তার ষড়যন্ত্রের গ্রন্থিগুলো এমন ভাবে বিন্যাস করেন যেন শাসন ক্ষমতা কোনক্রমে বাঙালি হস্তগত না হয় পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ তা সঠিকভাবে অনুধাবন করেন।


মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস

 পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর থেকে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ বাংলাকে অন্যতম ভাষা করার দাবি জানিয়ে আসছিল পাকিস্তান সরকারে যোগদান সম্পূর্ণভাবে বিরোধিতা করে হাজার ১৯৪৮ সালে উর্দুকে একমাত্র সরকারি ভাষা হিসেবে ঘোষণা করে এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ক্রমবর্ধমান প্রতিবাদ চলতে থাকে যা পরবর্তীতে ভাষা আন্দোলন নামে পরিচিতি লাভ করে এ আন্দোলন কোনো জীবিত হাজার ১৯৫২ সালের এবং সেই বছরে একুশে ফেব্রুয়ারি ভাষা দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে ছাত্র একত্রিত হয় হাজার ১৯৫২ সালের এবং সেই বছরের একুশে ফেব্রুয়ারি ভাষার দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে ছাত্র একত্রিত হয় পুলিশ ও সমাবেশে উপর গুলি চালানোর ফলে রফিক সালাম বরকত জব্বার অনেকেই শহীদ হন এ ঘটনায় আন্দোলনকে এক নতুন মাত্রা দান করে এবং রাজনৈতিক গুরুত্ব বহুমাত্রা বাড়িয়ে দেয় কোন ১৯৫৬ সালে চূড়ান্তভাবে সংবিধানে বাংলাকে উদ্যোগ পাশাপাশি অন্যতম প্রধান জাতীয় ভাষা হিসেবে গ্রহণ করা হয় ভাষা আন্দোলনকে পূর্বক পাকিস্তানের বাঙালি জাতীয়তাবাদের উত্থান হিসেবে উল্লেখ করা হয় এবং ছয় দফা আন্দোলন ৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হিসেবে বিবেচনা হয়।


১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট সাধারণ নির্বাচন হাজার ১৯৫৮ সালের সামরিক শাসন

১৯৫৪ সালের ১০ ই মার্চ পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচন পূর্ণ পূর্ববঙ্গের যুক্তফ্রন্ট সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে সরকার গঠন করে কিন্তু পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠী বাঙালি এই অধিপত্য মেনে নিতে পারেনি মাত্র আড়াই মাসের মধ্যে 30ml মেনে নিতে পারেনি কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশ মন্ত্রিসভার ভেঙ্গে দিয়ে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করা হয় হাজার ১৯৫৯ সালে সমগ্র পাকিস্তান সাধারণ নির্বাচনের সময় নির্ধারিত হলে বাঙ্গালীদের মধ্যে বিপুল সাড়া দেখা দেয় জনসংখ্যা 56 ভাগ বাঙালি অতএব এই নির্বাচনের ফলাফল চিন্তা করে কেন্দ্রীয় সরকার নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয় এই সময়ে সামরিক বাহিনীর ক্ষমতা দখলের কৌশল এর কেন্দ্রীয় সরকারের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি করে এই ধারাবাহিকতা হাজার ১৯৫৮ সালে পাকিস্তানে সামরিক শাসন জারি হয় হাজার ১৯৬২ সালের সামরিক শাসন তুলে নেয়া হলে ছাত্রসমাজ পরিষদ অধিকারের দাবিতে আন্দোলন সূত্র ঘটান।


১৯৬২ সালের শিক্ষা সংকোচন নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলন

আন্দোলন নতুন করে গণ আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটায় শিক্ষা সংকোচন নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলনরত ছাত্র মিছিলের ওপর পুলিশের গুলিতে ১৭ ই সেপ্টেম্বর নিহত হন যার মধ্যে ওয়াজিউল্লাহ মোস্তফা ও বাবুল অন্যতম ছাত্র সমাজের ২২ দফা দাবিকে কেন্দ্র করে ১৭ ই সেপ্টেম্বর ৬৩ শিক্ষা দিবস পালন উপলক্ষে দেশব্যাপী দুর্বার আন্দোলন গড়ে ওঠে রাজনৈতিক দলসমূহ বুদ্ধিজীবী সমাজ ছাত্রদের আন্দোলনের সবরকম সমর্থন নিয়ে এগিয়ে আসে ৫ ছাত্রসমাজের সশস্ত্র আন্দোলনের প্রস্তুতি পাকিস্তানের কাঠামোয় বাঙালি জাতিসত্তার বিকাশ ঘটা অসম্ভব বিবেচনা করে তৎকালীন ছাত্র সমাজের নেতৃস্থানীয় কয়েকজন হাজার ১৯৬২ সালে গোপনে ছাত্রদের সংগঠিত করার প্রচেষ্টা গ্রহণ করেন বাঙালি জাতীয়তাবাদের উদ্বুদ্ধ এই ছাত্র সংগঠনের নেতৃত্ব দেন জনাব সিরাজুল আলম খান জনাব আব্দুর রাজ্জাক এবং কাজী আরেফ আহমেদ এই সংগঠন স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদ নামে পরিচিত ছিল ছয় দফা আন্দোলন হাজার ১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধের সময় কালে বাস্তব ক্ষেত্রে প্রমাণিত হয় পূর্ব বাংলা সম্পূর্ণভাবে অক্ষত ছিল স্পষ্ট হয়ে ওঠে পাকিস্তানের সামরিক শাসন শাসক দল সামাজিক সাংস্কৃতিক নিপীড়ন ও অর্থনৈতিক শোষণের ধারাবাহিকতায় পূর্ববাংলার নিরাপত্তা ব্যবস্থার অন্যতম উন্নতি করার প্রচেষ্টা গ্রহণ করেনি বাঙ্গালীদের প্রতি জাতিগত বৈষম্যের বাস্তব চিত্র তুলে ধরে হাজার ১৯৬৬ সালের ৫ফেব্রুয়ারি আহত সর্বদলীয় জাতীয় সংহতি সম্মেলন শেখ মুজিবুর রহমান ছয় দফা দাবি উপস্থাপন করেন ভাষণে তিনি বলেন গত দুই যুগ ধরে পূর্ববাংলাকে যেভাবে শোষণ করা হয়েছে তার প্রতিকার কল্পে এবং পূর্ব বাংলার ভৌগোলিক দূরত্বের কথা বিবেচনা করে আমি ছয় দফা প্রস্তাব উত্থাপন করছি পরবর্তীতে এই ছয় দফা দাবি বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ হিসেবে বিবেচিত হয় আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা বাঙালি জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে সামরিক বাহিনীর কিছু সংখ্যক সদস্য রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সহযোগিতায় লেফটেন্যান্ট কমান্ডার মোয়াজ্জেম এর নেতৃত্বে পূর্ব বাংলাকে বিচ্ছিন্ন করে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখলের এক প্রচেষ্টা গ্রহণ করেন।


সংগঠনের কোনো সদস্য অসতর্কতার ফলে পাকিস্তান সরকারের কাছে এই পরিকল্পনার কথা ফাঁস হয়ে পড়েন পূর্ব পাকিস্তানকে বিচ্ছিন্ন করার ষড়যন্ত্রের ১৯৬৭ সালের ডিসেম্বর মাসে পাকিস্তান সরকার সামরিক-বেসামরিক ২৮ ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে হাজার 968 পাকিস্তান রহমানসহ ৩৫ ব্যক্তি কে গ্রেপ্তার করে রাষ্ট্রদ্রোহী মামলা দায়ের করেন মামলা আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা নামে পরিচিত১৯৬৮ উনিশে জুন ১৯৬৮ ঢাকা সেনানিবাসে এ মামলার বিচার শুরু হয় জেলা জেলের শেখ মুজিবকে আনবো এই গণ আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় বলা হয় এই সময় সমস্ত দেশব্যাপী সরকারবিরোধী আন্দোলন পূর্ণতা লাভ করে ।


৬৯ এর গণ আন্দোলন মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস

 পূর্ব বাংলার সাহিত্য শাসনে দাবীতে জাতীয়তাবাদী রাজনৈতিক দল ও ছাত্র সংগঠনগুলো সমন্বয় দেশব্যাপী আন্দোলন গড়ে ওঠে রাজনৈতিক স্লোগান পরিবর্তিত হয় তোমার আমার ঠিকানা পদ্মা মেঘনা যমুনা পিনা ঢাকা ঢাকা ঢাকা জাগো জাগো বাঙালি জাগো এই ধারাবাহিকতা সাহিত্য শাসন আমলে আন্দোলন বাংলাদেশ স্বাধীনতা আন্দোলনের পথ উন্মুক্ত করে আন্দোলন তার দিকে ধাবিত হতে থাকে এই সময় রাজনৈতিক দলের ছয় দফা দাবি গণদাবিতে পরিণত হয় বাঙালি জাতিসত্তা আন্দোলনের স্মৃতিতে পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি জেনারেল আইয়ুব খান দেশের সামরিক শাসন জারি করে।


সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ইয়াহিয়া খানের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে এই গণআন্দোলনের সময় পুলিশের গুলিতে জানুয়ারি ৬৯ ছাত্র আসাদুজ্জামান এবং ২৪ শে জানুয়ারি কোন স্কুলের ছাত্র মতিউর রহমান মৃত্যুবরণ করেন ছাত্র আন্দোলনের ভূমিকায় শহীদ আসাদ মতিউর দুটি উল্লেখযোগ্য নাম শেরেবাংলা নগর ও মোহাম্মদপুরে সংযোগস্থলে আইয়ুব গেট এর নাম পরিবর্তন করে আসাদগেট এবং বঙ্গভবনের সামনে উদ্যানের নাম মতিউর রহমান শিশু উদ্যান করা হয় জানুয়ারি ৬৯ গৃহীত ছাত্রদের 11 দফা আন্দোলনকে আরো বেগবান করে।


 ১৫ ই ফেব্রুয়ারি ৬৯ পাকিস্তান সেনাবাহিনীর গুলিতে আহত অবস্থায় বন্দী আগরতলা মামলায় অভিযুক্ত সার্জেন্ট জহুরুল মৃত্যুবরণ করেন ১৮ ই ফেব্রুয়ারি  ৬৯ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাক্তার শামসুজ্জোহা পুলিশের গুলিতে নিহত হন এই মৃত্যুর সংবাদ গণ-আন্দোলনের আরেকটি নতুন মাত্রা যুক্ত করে প্রচন্ড আন্দোলনের মুখে পাকিস্তান সরকার একুশে ফেব্রুয়ারি ৬৯ এই মামলা প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয় ২২ শে ফেব্রুয়ারি শেখ মুজিবুর রহমানসহ অভিযুক্ত সকলেই ঢাকা সেনানিবাস থেকে মুক্তি লাভ করেন এই আন্দোলনের মধ্য দিয়ে শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালি জাতির একক এবং অবিসংবাদিত নেতা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন তেইশে ফেব্রুয়ারি ৬৯সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের পক্ষ থেকে ঢাকার রেসকোর্স ময়দানের বর্তমান এক বিশাল গণসংবর্ধনা শেখ মুজিবুর রহমানকে বঙ্গবন্ধু উপাধিতে ভূষিত করা হয়।


এ মামলায় অভিযুক্ত ও বন্দী অবস্থায় সেনাবাহিনীর গুলিতে নিহত সার্জেন্ট জহুরুল হক ও ডাক্তার শামসুজ্জোহা কে জাতি শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম সৈনিক হিসেবে চিহ্নিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্জেন্ট জহুরুল হক ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শামসুজ্জোহা দেশের নামকরণ করা হয়েছে ঊনসত্তরের এই ছাত্র আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন সিরাজুল আলম খান আব্দুর রাজ্জাক কাজী আরেফ আহমেদ আব্দুর রউফ আলী আহমেদ আসম আব্দুর রব নূরে আলম সিদ্দিকী শাহজাহান সিরাজ শামসুজ্জোহা মোস্তফা জামাল হায়দার ।


রাজনৈতিক দলীয় প্রধান যাদের নিরলস পরিশ্রম ও নির্দেশনা বাঙালি আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকারের এই আন্দোলন পূর্ণতা লাভ করেছিল তাদের মধ্যে জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কমরেড মণি সিংহ অধ্যাপক মুজাফ্ফর আহমেদ শ্রী মনোরঞ্জন ধর অন্যতম।


৭০ এর সাধারণ নির্বাচন মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস

 ২৫শে মার্চ ১৯৬৯ সারা দেশের সামরিক শাসন জারির মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা হস্তান্তর করা হলে ও সামরিক সরকার গণদাবিকে উপেক্ষা করার মতো শক্তি সঞ্চয় করতে পারেনি তাই প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক জেনারেল ইয়াহিয়া খান সারাদেশে এক ব্যক্তির নীতিতে সাধারণ নির্বাচন দিতে বাধ্য হন ১৯৭০ থেকে ১৯৭৯ ডিসেম্বর ৭০ এর মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে তফসিল ঘোষণা করা হয় এবং শান্তিপূর্ণভাবে দেশব্যাপী এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় নির্বাচনে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ ও বাঙালী জাতীয়তাবাদের পক্ষে রায় প্রদান করে এ নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ জাতীয় পরিষদে ৩০০ আসনের মধ্যে ১৬৭ আসনে জয়লাভ করে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার গঠনের ম্যান্ডেট লাভ করে বাঙালি শাসন মেনে নেওয়া যায় না এই নীতিতে পাকিস্তানি সামরিক শাসন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রতিবন্ধক হয়ে ওঠে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাংলার জাতীয় নেতৃবৃন্দ এই প্রতিবাদের অধিকার আন্দোলনে নতুন মাত্রা যোগ করে ।


৭০ বঙ্গবন্ধু 1কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে পূর্ব বাংলার ম্যাপ অঙ্কিত একটি পতাকা প্রদান করেন এই পতাকায় পরবর্তীতে বাংলাদেশের পতাকা হিসেবে গৃহীত হয় ছাত্রদের এই সংগঠন প্রতিরোধ যুদ্ধের প্রস্তুতি গ্রহণ করে প্রতিটি জেলা ও মহাকুমা শহরের শুরু হয় সামরিক প্রশিক্ষণের মহড়া জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে ছাত্র ও যুব সমাজের অংশগ্রহণ জনসমাজকে আরও উৎসাহিত করে তোলে।


১০. একাত্তরের অসহযোগ আন্দোলন মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস

 নির্বাচনে জয়লাভের পর পাকিস্তানের সামরিক শাসক জেনারেল মোহাম্মদ ইয়াহিয়া খান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সরকার গঠনে মদ দিতে অস্বীকার করেন একটি রাজনৈতিক দল জনগণের ভোটে সংখ্যাগরিষ্ঠা ।


নিয়ে সরকার গঠনের মেন্টেন পেয়েছে তারা সরকার গঠন করবে এটাই ছিল বাস্তবতা কিন্তু সামরিক শাসন সরকার গঠন বা নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর প্রক্রিয়া বাদ দিয়ে আলোচনা শুরু করে কিসের জন্য আলোচনা এটা বুঝতে বাঙালির নেতৃবৃন্দের খুব একটা সময় লাগেনি জাতীয় সংসদের নির্ধারিত অধিবেশনের প্রতিবাদে বঙ্গবন্ধুর 1971 দেশব্যাপী অসহযোগ আহ্বান জানায় সর্বস্তরের জনগণ একবাক্যে বঙ্গবন্ধুর আহবানে সাড়া দিয়ে পূর্ব-পাকিস্তানের সমস্ত প্রশাসনিক ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে কতল করে তোলে ড্রামা ৭১ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের পতাকা প্রবর্তিত হয় ৩রা মার্চ ৭১ এর রমনা রেসকোর্স ময়দান স্বাধীন স্বাধীন বাংলাদেশ ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের পক্ষ থেকে স্বাধীনতার ইশতেহার করা হয় এই ইশতেহারে আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি গানটি কে জাতীয় সংগীত হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয় এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে প্রতি আস্থা রেখে সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।


 পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর জাতীয় পরিষদের নির্বাচনে প্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর বিষয়ক হাজার ১৯৭২ বঙ্গবন্ধু রমনা রেসকোর্স ময়দান বর্তমান সমগ্র বাঙালি জাতিকে দিকনির্দেশনা ভাষণের সর্বপ্রকার পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য প্রস্তুত হতে আহ্বান জানায় এই ভাষণে তিনি বলেন আমি যদি হুকুম দেওয়ার নাও পারি তোমাদের কাছে আমার অনুরোধ রইলো ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোল এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম বঙ্গবন্ধুর ভাষণ পৃথিবীতে উল্লেখযোগ্য নেতৃবৃন্দের মধ্যে অন্যতম একটি হিসাবে বিবেচিত ৭মার্চ বঙ্গবন্ধুর এই নির্দেশ কোন দলীয় নেতা দিয়েছে দিয়েছিল না ছিল একজন জাতীয় নেতার নির্দেশ এই নির্দেশ দেশের সর্বস্তরের ছাত্র-জনতা ও বুদ্ধিজীবীদের সাথে বাঙালি সামরিক বেসামরিক কর্মকর্তা ও কর্মচারী সকলের সচেতন করে তোলে ২৭১ থেকে পূর্ব বাংলার সমস্ত প্রশাসনিক কাজকর্ম চলতে থাকে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে।


 তেইশে মার্চ ৭১ সালে পল্টন ময়দানে জয়বাংলা বাহিনীর কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হয় অনুষ্ঠান শেষে এই বাহিনীর নেতৃত্বে বাংলাদেশের পতাকা সহ বঙ্গবন্ধু ভবনে প্রবেশ করে আনুষ্ঠানিকভাবে বাড়িতে এই পতাকা উত্তোলন করে এই একই সাথে বঙ্গবন্ধুর গাড়িতে এই পতাকা লাগানো হয় শে মার্চ পূর্ববাংলা প্রতিটি শহরে পাকিস্তান দিবসের অনুষ্ঠান বর্জিত এবং পাকিস্তানের পতাকা পরিবর্তে বাংলাদেশের পতাকা উড়তে দেখা যায় অন্যদিকে ক্ষমতা হস্তান্তরের নামেই আলোচনা অবস্থা পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র জনাব জুলফিকার আলী ভুট্টো সৃষ্টির সমস্যার রাজনৈতিক সমাধানের পরিবর্তে নতুন করে সংকটের সৃষ্টি হয়।


ও যুক্তি উপস্থাপনের ফলে রাজনৈতিক সমাধানের পথ রুদ্ধ হয়ে পড়ে পাকিস্তান সামরিক শাসন স্বার্থন্বেষী মহলের সাথে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে সামরিক ক্ষমতা প্রয়োগের প্রস্তুতি গ্রহণ করে একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডের জন্য রাজনৈতিক আলোচনার আড়াল সামরিক বাহিনী মাত্র ২২ দিনে ২পাকিস্তান থেকে পূর্ব বাংলায় স্থানান্তরের সক্ষম হয় বাস্তবতা এটি ছিল তাদের আলোচনার নামে কাল ক্ষেপণাস্ত্র মূল উদ্দেশ্য চব্বিশে মার্চ ৭১ সামরিক শাসন হেলিকপ্টারযোগে সমস্ত সেনানিবাসে এই আক্রমণের পরিকল্পনা হস্তান্তর করে বাঙালি জাতির উপর পাকিস্তান সামরিক বাহিনী এই হত্যাযজ্ঞের নির্দেশ নামা অপারেশন সার্চলাইট নামে পরিচিত।


 ২৫ শে মার্চ ৭১ রাত এগারোটা পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অতর্কিত আক্রমণের প্রস্তুতি নিয়ে সেনানিবাস অথবা আক্রমণ প্রস্থ স্থানগুলি ত্যাগ করেন একই সাথে ঢাকাসহ দেশের সমস্ত বড় বড় শহর ও সেনানিবাসের বাঙালি রেজিস্ট্যান্ট আক্রান্ত হয় সেনাবাহিনীর হাতে বঙ্গবন্ধু রাত 12:30 এ ধানমন্ডির বাসভবন থেকে বন্দী হবার পূর্বে তিনি দলীয় নেতৃবৃন্দকে করণীয় বিষয়ে যথাযথ নির্দেশ দিয়ে অবস্থান পরিবর্তনের কথা বলেন একই সাথে তিনি বাংলাদেশকে একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা করেন বঙ্গবন্ধুর এই ঘোষণা বিভিন্ন মাধ্যমে পরিচালিত হয়।


অপারেশন সার্চ অপশন ২৫ মার্চের গণহত্যা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস

২৫ মার্চ পাকিস্তান সেনাবাহিনী পূর্ব পাকিস্তানের বড় শহরগুলোতে গণহত্যা শুরু করে তাদের পূর্বপরিকল্পিত এই গণহত্যা অপারেশন সার্চলাইট নামে পরিচিত এই গনহত্যা পরিকল্পনার অংশ হিসেবে আগে থেকেই পাকিস্তান আর্মি তে কর্মরত বাঙালি অফিসারদের হত্যা কিংবা গ্রেপ্তার করার চেষ্টা করা হয় ঢাকার পিলখানায় রাজার বাগ পুলিশ লাইন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রামসহ সারাদেশে সামরিক আধা-সামরিক নির্মমভাবে হত্যা করা হয় এই হত্যাকাণ্ডের কথা যেন না জানতে পারে সেজন্য আগেই সকল বিদেশি সাংবাদিকদের গতিবিধির উপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয় এবং কে দেশ থেকে বের করে দেওয়া হয় তবে পোস্ট এর বিখ্যাত সাংবাদিক সায়মন ড্রিং জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাংলাদেশের রিপোর্ট প্রকাশ করেন এর মধ্য দিয়ে বিশ্ব এই গনহত্যা সম্পর্কে অবগত হয় আলোচনার নামে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া কালক্ষেপণ ও এই গনহত্যা পরিকল্পনারই অংশ ছিল।


 ২৫ শে মার্চ রাত সাড়ে ১১ টার দিকে পাকিস্তানি বাহিনী তাদের হত্যাযজ্ঞ শুরু করে পাকিস্তানিদের অপারেশনের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের জগন্নাথ হলের ছাত্র দের নির্বিচারে হত্যা করা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও আশপাশে বহুসংখ্যক শিক্ষক-কর্মচারীদের ও হত্যা করা হয় পুরনো ঢাকার হিন্দু সম্প্রদায় এলাকাগুলোতেও চালানো হয় ব্যাপক গণহত্যা রাজার বাগ পুলিশ লাইন আক্রমণ করে হত্যা করা হয় পুলিশ বাহিনীর সদস্য পিলখানায় ইপিআর এর কেন্দ্রে আক্রমণ চালিয়ে নির্বিচারে হত্যা করা হয় নিরস্ত্র সদস্যদের কয়েকটি পত্রিকায় অফিস করা হয় সৃষ্টির লক্ষ্যে নির্বিচারে হত্যা করা হয় বিভিন্ন ধরনের হত্যা করা হয়।


স্বাধীনতার ঘোষণা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস

 তিনি পাকিস্তানি সশস্ত্র বাহিনীর বিরুদ্ধে সর্বাত্মক সংগ্রামের জন্য বাংলার জনগণকে আহ্বান জানান চট্টগ্রামের তৎকালীন ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস ট্রান্সমিটার এর মাধ্যমে প্রচারের জন্য পাঠানো হয় ২৬ শে মার্চ চট্টগ্রাম বেতার কেন্দ্র থেকে বঙ্গবন্ধু ঘোষণা কে অবলম্বন করে চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগ নেতা এমএ হান্নান স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেন সাতাশে মার্চ চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতারকেন্দ্র থেকে আট ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট মেজর জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেন এই ঘোষণাটি তিনি উল্লেখ করেন যে বাংলাদেশ শেখ শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে একটি স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র গঠিত হয়েছে তিনি আরও উল্লেখ করেন যে নবগঠিত এই রাষ্ট্রের সরকার জোট বদ্ধ না হয়ে বিশেষ অপর রাষ্ট্রগুলো সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক সৃষ্টি আগ্রহী এ ছাড়া ওই ঘটনায় সারা বিশ্বের সরকারগুলোকে বাংলাদেশে সংঘটিত গণহত্যার বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলার আহ্বান জানানো হয় বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের দলিলপত্র মুজিব নগর প্রশাসন তৃতীয় খন্ড প্রকাশ নভেম্বর ১৯৮২।


গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার গঠন মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস

 ১০ এপ্রিল নির্বাচনে সাংসদ আগরতলা একত্রিত হয়ে এক সর্বভৌমত্ত সিদ্ধান্তের সরকার গঠন করে এই সরকার স্বাধীন সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার এই সরকারের কার্যকারিতা সাংবিধানিকভাবে স্বীকৃতি হয় ১৭ ই এপ্রিল ৭১ মেহেরপুর মহকুমার ভবেরপাড়া গ্রামে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে শপথ গ্রহণ করেন রাষ্ট্রপতি পদ পদ্ধতি সরকারের মন্ত্রী পরিষদ সদস্যদের শপথ পাঠ করান জাতীয় সংসদের স্পিকার অধ্যাপক ইউসুফ আলী যে সমস্ত নেতৃবৃন্দকে নিয়ে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার গঠিত হয় তারা হলেন।


  •  রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানি বন্দি
  •  উপ রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি
  •  প্রধানমন্ত্রী আহ্মেদ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় দায়িত্বপ্রাপ্ত
  •  অর্থমন্ত্রী ক্যাপ্টেন মনসুর আলী শিল্প বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত
  •  খন্দকার মোশতাক আহমেদ আইন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত
  •  স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এইচ এম কামরুজ্জামান দায়িত্বপ্রাপ্ত


এই অনুষ্ঠানে উপরাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি হিসেবে বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে এবং কর্নেল এম এ জি ওসমানী মুক্তিবাহিনীর প্রধান সেনাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন বলেন সরকার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় দেশ-বিদেশে শতাধিক সাংবাদিকও হাজার দেশবাসীর উপস্থিতিতে এই শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন সাংসদ জনাব আব্দুল মান্নান নবগঠিত সরকারের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি কে আনুষ্ঠানিকভাবে গার্ড অফ অনার দেওয়া হয় বাঙালির প্রাণপুরুষ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের এই স্থানটির নাম করণ করা হয় মুজিবনগর মুক্তিযুদ্ধ ছিল একটি জনযুদ্ধ দেশের সর্বস্তরের মানুষ এই যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে রাজনৈতিকভাবে এই যুদ্ধকে সার্বজনীন করার লক্ষ্যে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার সর্বসম্মতিক্রমে একটি সর্বদলীয় উপদেষ্টা পরিষদ গঠন করেন এই উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ছিলেন।


  • জনাব আব্দুল হামিদ খান ভাসানী সভাপতি
  •  জনাব শ্রী মনি সিং সভাপতি বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি
  •  জনাব অধ্যাপক মুজাফ্ফর আহমেদ সভাপতি মোজাফফর
  •  জনাব শ্রী মনোরঞ্জন ধর সভাপতি বাংলাদেশ জাতীয় কংগ্রেস
  •  জনাব তাজউদ্দিন আহমেদ প্রধানমন্ত্রী অধিকার বলে
  •  জনাব খন্দকার  মোস্তাক আহমেদ পরাষ্ট্রমন্ত্রী পদ্ধতি কাকে বলে


গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার অত্যন্ত দক্ষতার সাথে ৯ মাসব্যাপী সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করেন মুক্তিবাহিনীর প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও গোলাবারুদ সরবরাহ খাদ্য চিকিৎসা ব্যবস্থা সরকার প্রায় এক কোটি শরণার্থীর দায়িত্বভার গ্রহণ করেন কূটনীতিকদের মাধ্যমে বিশ্বের কাছে মুক্তিযুদ্ধের বাস্তবতার উপস্থাপনসহ এবং একটি সময়োপযোগী প্রশাসনিক কাঠামো গড়ে তুলতে সক্ষম হন।


 পাকিস্তান বাহিনী ও তাদের সহযোগী রাজাকার দের অত্যাচারে প্রায় এক কোটি বাঙালির দেশত্যাগ করে পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র ভারতে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয় ভারত ভারতের জনগণ দেশত্যাগী এই জনগোষ্ঠী সার্বিক সাহায্যে এগিয়ে আসেন ভারত সরকার বাংলাদেশ সরকারকে সার্বিকভাবে সহযোগিতা দান করেন।


 মুক্তিযুদ্ধকালীন বাংলাদেশ সরকারের প্রশাসনিক কাঠামো কর্মরত গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ।


 যে সমস্ত রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব প্রশাসনিক কাঠামোর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।


  •  স্বাস্থ্য বিষয়ক উপদেষ্টা জনাব আব্দুস সামাদ আজাদ এম এন এ
  • প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ব্যারিস্টার জনাব আমীর-উল-ইসলাম এম এন এ
  •  তথ্য মন্ত্রণালয় ভারপ্রাপ্ত জনাব আব্দুল মান্নান এম এন এ
  •  জয় বাংলা পত্রিকার উপদেষ্টা জনাব জিল্লুর রহমান এম এন এ
  •  যুব শিবির নিয়ন্ত্রণ পরিষদ চেয়ারম্যান জনাব অধ্যাপক ইউসুফ আলী


বেসামরিক প্রশাসন


  •  ক্যাবিনেট সচিব জনাব হোসেন তৌফিক ইমাম এইচটি ইমাম
  •  মুখ্য সচিব জনাব রুহুল কুদ্দুস
  •  সংস্থাপন সচিব জনাব নুরুল কাদের খান
  •  অর্থ সচিব জনাব খন্দকার আসাদুজ্জামান
  •  পররাষ্ট্র সচিব জনাব মাহবুবুল আলম চাষী এবং জনাব আব্দুল ফতে
  •  প্রতিরক্ষা সচিব জনাব এম এ সামাদ
  •  স্বরাষ্ট্র সচিব জনাব এ খালেক
  •  স্বাস্থ্য সচিব জনাব  এস টি হোসেন
  • তথ্য সচিব আনারুল হক খান
  •  কৃষি সচিব জনাব নূর উদ্দিন আহমেদ
  •  আইন সচিব জনাব হান্নান চৌধুরী


 কূটনৈতিক দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে যে সমস্ত ব্যক্তিবর্গ মুক্তিযুদ্ধকে বিশ্ববাসীর কাছে গ্রহন যোগ্য করে গড়ে তুলেছিলেন।


  •  মিশন প্রধান যুক্তরাজ্য বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী বহির্বিশ্বে সরকারের বিশেষ দূত
  •  মিশন প্রধান কলিকাতা হোসেন আলী
  •  মিশন প্রধান নতুন দিল্লির জনাব হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী
  •  মিশন প্রধান যুক্তরাষ্ট্র যুক্তরাষ্ট্র-কানাডা এম আর
  •  মিশন দায়িত্বপ্রাপ্ত ইরাবতী
  •  দায়িত্বপ্রাপ্ত সুইজারল্যান্ড অলিউর রহমান
  •  মিশন মিশন দায়িত্বপ্রাপ্ত ফিলিপাইন থেকে পণ্য
  •  মিশন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেপাল মুস্তাফিজুর রহমান
  •  মিশন দায়িত্বপ্রাপ্ত হংকং মহিউদ্দিন আহমেদ
  •  মিশন দায়িত্বপ্রাপ্ত জাকির


স্বাধীন বাংলাদেশের গণমুখী প্রশাসনিক ও অর্থনৈতিক কাঠামো কি হবে সেই লক্ষ্যে মুক্তিযুদ্ধকালীন বাংলাদেশ সরকারের নির্দেশে পরিকল্পনা কমিশন একটি রূপরেখা প্রণয়ন করে যে সমস্ত উল্লেখযোগ্য ব্যক্তি এই পরিকল্পনায় জড়িত ছিলেন তাঁরা হলেন।


  •  ডঃ মুজাফফর আহমেদ চৌধুরী
  •  ডাক্তার মোশারফ হোসেন
  •  ডাক্তার খান সারওয়ার মুরশিদ
  •  ডাক্তার এম আনিসুজ্জামান
  •  ডাক্তার সদেশ


 মুক্ত এলাকায় সুষ্ঠু প্রশাসনিক কাঠামো গড়ে তোলা এবং ভারতের অবস্থান গ্রহণ কালী শরণার্থীদের দেখাশোনা ও শিবির পরিচালনার জন্য সরকার সমস্ত বাংলাদেশকে ১১টি প্রশাসনিক অঞ্চলে বিভক্ত করে প্রতিটি প্রশাসনিক এলাকার চেয়ারম্যান ও প্রশাসন নিয়োগ করেন।


 স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস

 মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের এবং অবরুদ্ধ এলাকার জনগণের অক্ষুন্ন রাখার ক্ষেত্রে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এই স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে বাংলাদেশ সরকারের রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিপরিষদ সদস্যদের নীতিনির্ধারণ সহ জনগণের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন নির্দেশগুলি প্রচলিত হয় প্রতিদিনের সংবাদ সমস্ত অনুষ্ঠান জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিল তার মধ্যে চরমপত্র ও জল্লাদের দরবার অন্যতম যে সমস্ত ব্যক্তি অক্লান্ত পরিশ্রমে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে এই জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলেন তাঁরা হলেন।


 জনাব এম এ মান্নান এম এন এ, জিল্লুর রহমান এম এন এ, শওকত ওসমান, ডাক্তার এ আর মল্লিক, ডাক্তার নজরুল ইসলাম, ডাক্তার আনিসুজ্জামান, সিকান্দার আবু জাফর, কল্যাণ মিত্র, ফায়েজ আহ্মেদ, আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী, এম আর আখতার মুকুল, কুয়াপ খান, আসাদ চৌধুরী, কামাল লোহানী, আলমগীর কোভিদ, মহাদেব সাহা, আলী যাকের, সৈয়দ হাসান ইমাম, নির্মলেন্দু গুণ, আবুল কাশেম সন্দ্বীপ, বেলাল মোহাম্মদ, আব্দুল জব্বার, আপেল মাহমুদ, রবীন্দ্রনাথ রায়, কাদেরী কিবরিয়া, ডাক্তার অরূপ রতন চৌধুরী, রফিকুল ইসলাম, সমর দাস, অজিত রায়, রাজু আহমেদ, মামুনুর রশিদ, বেগম মুশতারী শফী, শাহীন মাহমুদ, কল্যাণী ঘোষ, ডালিয়া নওশীন, মিতালী মুখার্জী, বুলবুল মহালয়া নবীশ, শামসুল হুদা চৌধুরী, আশরাফুর রহমান খান, সৈয়দ আব্দুল নাকের সহ অনেকে।


 বাংলাদেশ মুক্তিবাহিনী মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস

যে জনযুদ্ধ এসেছে পতাকা সেই জনযুদ্ধের দাবিদার এদেশের সাত কোটি বাঙালি একটি সশস্ত্র যুদ্ধ দেশকে শত্রুমুক্ত করে এই সশস্ত্র যুদ্ধ একটি নির্বাচিত সরকারের নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত হয় পরিকল্পিত এই যুদ্ধ পরিচালনার জন্য ১০ এপ্রিল ৭১ বাংলাদেশ সরকার সমগ্র বাংলাদেশকে চার ৪টি যুদ্ধ অঞ্চলে বিভক্ত করে এই চার ৪টি অঞ্চলে দায়িত্বপ্রাপ্ত অধিনায়ক ছিলেন।


  •  চট্টগ্রাম অঞ্চল মেজর জিয়াউর রহমান
  •  কুমিল্লা অঞ্চল মেজর খালেদ মোশাররফ
  • সিলেট অঞ্চল মেজর কে এম শফিউল্লাহ
  •  দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চল মেজর আবু ওসমান চৌধুরী


 পরবর্তীতে দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলে বিভক্ত করে রাজশাহী অঞ্চলে মেজর নাজমুল হক দিনাজপুর অঞ্চলের উদ্দিন এবং খুলনা অঞ্চলে মেজর জলিলকে দায়িত্ব দেওয়া হয় 

৭ই জুলাই ৭১ যুদ্ধের কৌশলগত কারণে সরকার নিয়মিত পদাতিক ব্রিগেডের গঠনের পরিকল্পনা ৪ ব্রিগেড গঠন করেন এ জেড ফোর্সের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল জিয়াউর রহমানকে কিভাবে সেপ্টেম্বর মাসে এবং ১৪ ই অক্টোবর কে চার্জ গঠন করা হয় কে ফোর্সের অধিনায়ক ছিলেন লেফটেন্যান্ট কর্নেল খালেদ মোশাররফ এবং ফোর্সের অধিনায়ক ছিলেন লেফটেন্যান্ট কর্নেল এম শফিউল্লাহ।


 ১০ই জুলাই পর্যন্ত মুক্তিবাহিনী সদরদপ্তরে প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে যুদ্ধ অঞ্চলের অধিনায়কদের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় এই অধিবেশনে বাংলাদেশকে ১১ টি সেক্টরে বিভক্ত করে সেক্টর কমান্ডার নিযুক্ত করা হয় এই কমান্ডারগন ছিলেন।


সেক্টর অধিনায়ক যুদ্ধে লেখা তথ্য


 সেক্টর মেজর রফিকুল ইসলাম চট্টগ্রাম পার্বত্য চট্টগ্রাম ও নোয়াখালী জেলা ফেনী মহকুমার অংশবিশেষ নদীর পূর্ব পর্যন্ত এই সেক্টরের সাব-সেক্টর ছিল পাঁচটি সেক্টর ট্রুপস্ ছিল ২১০০ সৈন্য এবং গেরিলা ছিল ২০০০০ 


 সেই ২৭০ মেজর খালেদ মোশাররফ কুমিল্লা জেলার অংশ ঢাকা ফরিদপুর জেলার অংশ সেক্টরের সাব-সেক্টর ছিল ৬টি সেক্টর ট্রুপস্ ছিল ৪০০০ স্বর্ণ এবং গেরিলা ছিল ৩০০০০

 sector-3 মেজর কে এম শফিউল্লাহ কুমিল্লা জেলার অংশ সিলেট জেলার অংশ এই সেক্টরের সাব-সেক্টর ছিল সেক্টর ট্রুপস্ ছিল ৬৬৯৩  এবং গেরিলা ছিল ২৫০০০  

সেক্টর ৪ মেজর সি আর দত্ত সিলেট জেলার অংশ ময়মনসিং জেলার অংশ এই সেক্টরের সাব-সেক্টর ছিল 6টি সেক্টর  টিপস  ছিল ২৩১০  সৈন্য এবং গেরিলা ছিল ৯০০০।


Previous Post
Next Post
Related Posts