মির্জাপুর ক্যাডেট কলেজ Mirzapur Cadet College
প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের ক্যাডেট কলেজের তালিকা
টাঙ্গাইল জেলা মির্জাপুর Tangail District Mirzapur
মির্জাপুর ক্যাডেট কলেজ বাংলাদেশের তৃতীয় ক্যাডেট কলেজ। অন্যান্য ক্যাডেট কলেজ এর মতই এতেও জাতীয় পাঠ্যক্রম বাস্তবায়নের পাশাপাশি ক্যাডেটদের শারিরীক, মানুষিক, বুদ্ধিবৃত্তিক, চারিত্রিক, সাংস্কৃতি ও নেতৃত্ব গুণাবলী বিকাশের লক্ষ্যে সঠিক ধারা সম্পর্কে বিভিন্ন কর্মকাণ্ডমূলক কার্যদ্বারা পরিচালিত। এর পাশাপাশি এ ক্যাডেট কলেজ শিক্ষা ক্ষেত্রে বিশেষ সাফল্য লাভ করেছে। কলেজটি বাংলাদেশের টাঙ্গাইল জেলার মির্জাপুর উপজেলা গুরাই ইউনিয়নে অবস্থিত ।
নীতিবাক্য - বিদ্যাই বল
প্রতিষ্ঠাকাল - ২৯ নভেম্বর ১৯৬৩
কার্যক্রম শুরু - ১৯৬৫
বিদ্যালয় কোড - 133861
প্রথম প্রধান শিক্ষক - মাইকেল উইলিয়াম পিট
আয়তন - ৯৫ একর
রং - মেরুন
বিশেষণ - মির্জাপুরিয়ান
ওয়েবসাইট - https://mcc.army.mil.bd/
শিক্ষাব্যবস্থা
মির্জাপুর ক্যাডেট কলেজ এ ক্যাডেটগণ সপ্তম শ্রেণিতে ভর্তি হন এবং ছয় বছর তাদের পড়াশুনা চালান। এইচএসসি পরীক্ষার মাধ্যমে চূড়ান্ত পরীক্ষা হয়ে শিক্ষা কার্যক্রম ক্যাডেট কলেজ এ শেষ হয়। মির্জাপুর ক্যাডেট কলেজ ঢাকা বিভাগের শিক্ষা বোর্ডের অধীনে শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত হয়। বিভিন্ন শৃঙ্খলা, সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে দেশের এ ক্যাডেট কলেজ এ শিক্ষা কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হয়।
ইতিহাস
চট্টগ্রাম জেলার ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজ, খুলনা বিভাগের ঝিনাইদহ ক্যাডেট কলেজ প্রতিষ্ঠিত হবার পর মোমেনশাহী ক্যাডেট কলেজ (মির্জাপুর ক্যাডেট কলেজ পূর্ববর্তী নাম) প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা করা হয়। অন্যদের মতো পাকিস্তান সেনাবাহিনীর জন্য যোগ্য কর্মকর্তা তৈরি করাই ছিল এ কলেজের মূল লক্ষ্য। পাকিস্তান আমলে পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি ফিল্ড মার্শাল আইয়ুব খান এ ক্যাডেট কলেজ প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেন। ১৯৬৩ সালের ২৯শে নভেম্বর ময়মনসিংহ জেলার মির্জাপুরের গোড়াই নামক স্থানে কলেজের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপিত হয়। তারপর থেকে কলেজের চালু করার সবরকম আয়োজন চলতে থাকে কিন্তু তা মোটেই সহজ ছিল না কারণ পুরো কলেজ এলাকাটি ছিল অরণ্য বেষ্টিত এবং কলেজের পাশে অবস্থিত রাজার বাড়ি গ্রামটি তখনো পুরোপুরি বিকশিত হয়নি। মোটামুটি একটি বন্ধুর বিরানভূমি কেটেছেটে সমান করা হয় এবং কলেজের পাশে বড় ধরনের একটি খাল তৈরি হয়ে যায়। ৯৫ একর এলাকা নিয়ে গড়ে ওঠা মোমেনশাহী ক্যাডেট কলেজ মেজর জেনারেল ফজলে মুকিম খান কলেজ এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হয় ১৯৬৫ সালের ৯ জানুয়ারি তারিখে। এদিনটিকে কলেজের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী হিসেবে পালন করা হয় কলেজের প্রথম অধ্যক্ষ হিসেবে এম ডব্লিউ পিট কে নিয়োগ দেওয়া হয়।
১৯৬৫ সালে কলেজে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয় প্রথমে একসাথে চারটি ইনটেক (ব্যাচ) কে ভর্তি করা হয়। তখন ক্যাডেটদের থাকার জন্য দুটি হাউজ ছিল হাউসগুলোর নাম ও বর্তমানের মত ছিল না বর্তমান ফজলুল হক হাউজের নাম ছিল ঝিন্নাহ হাউস ও সোহরাওয়ার্দি হাউসের নাম ছিল আইয়ুব হাউস। বর্তমানের নজরুল হাউস ও তখন প্রতিষ্ঠিত হয়নি। পরবর্তী বছর যখন নতুন ইনটেক নেওয়া হয় তখন তাদের থাকার ব্যবস্থা করার জন্য হাউস তৈরি করা হয় যার বর্তমান নাম নজরুল হাউস। কলেজেটি প্রথম বছরেই ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে।
স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন সময়ে কলেজ যখন পুরোদমে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে, তখন শুরু হয় স্বাধীনতা যুদ্ধ ১৯৭১ সালে কলেজের অধ্যক্ষ এবং অ্যাডজুটেন্ট দুজনেই ছিলেন পাকিস্তানি। রাজশাহী ক্যাডেট কলেজে সেখানে অ্যাডজুটেন্ট নিজেই ক্যাডেটদের যুদ্ধে যেতে উৎসাহিত করেছেন সেখানে মোমেনশাহীর অবস্থান ছিল সম্পূর্ণ বিপরীত। মেজর কাইয়ুম ছিলেন এ্যাডজুটেন্ট। এই প্রতিকূলতা সত্ত্বেও বেশকিছু ক্যাডেট যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে শহীদ খোরশেদ তারই উদাহরণ। এছাড়াও আরো কয়েকজন যুদ্ধে অংশ নেন এবং তাদের মধ্যে কয়েকজন আবার যুদ্ধ শেষে করে কলেজে ফিরে আসেন।
ভর্তি সংক্রান্ত
বাংলাদেশের সকল ক্যাডেট কলেজ সমূহে ভর্তির এপ্লাই করার জন্য নভেম্বর থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে আবেদন করতে হয় । এবং ক্যাডেট কলেজের ভর্তি পরীক্ষার জন্য জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে নির্ধারণ করে । সাধারণত ভর্তির ফলাফল এর পর যারা উত্তীর্ণ হন/ কৃতকার্য হন তাদেরকে এবং তাদের পরিবারকে মৌখিক পরীক্ষার জন্য ডাকা হয়। মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর তাদেরকে মেডিকেল করানো হয় । মেডিকেলে উত্তীর্ণ হওয়ার পর মূল ভর্তির কার্যক্রম শুরু হয় ।
বাংলাদেশ ক্যাডেট কলেজ সমূহে ভর্তির বিজ্ঞপ্তি আবেদন পদ্ধতি সহ বিস্তারিত
আবেদনের যোগ্যতা
ক্যাডেট কলেজে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের ইচ্ছুকদের অবশ্যই বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে, এছাড়া তাদের ষষ্ঠ শ্রেণির পরীক্ষার উত্তীর্ণ হতে হবে। নির্ধারিত বয়স সীমা সর্বোচ্চ ১৪ বছর, ছেলে ও মেয়ে উভয়ের উচ্চতা থাকতে হবে কমপক্ষে চার ফুট ৮ ইঞ্চি, ইতিমধ্যে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে উত্তীর্ণ হতে পারেনি এমন শিক্ষার্থীরা আবেদনের অযোগ্য, এছাড়া বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা যেমন গ্রস , নকনি, ফ্লাট ফুট, বর্ণান্ধ ,অতিরিক্ত ওজন, এবং বিভিন্ন রোগ যেমন- ইজমা, মিরগি, হূদরোগ, বাত, যক্ষা, পুরনো আমাশয়, হেপাটাইটিস, রাতকানা, ডায়াবেটিস সহ আরো কয়েকটি রোগে আক্রান্ত শিক্ষার্থীরা আবেদনের অযোগ্য বিবেচিত হবেন।
আবেদনের নিয়ম
ক্যাডেট কলেজ ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য শিক্ষার্থীদের অনলাইনে আবেদন করতে হবে, এজন্য শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের ব্যবহার করতে হবে www.cadetcollege.army.mil.bd এই ওয়েবসাইটটি , আবেদনের সময় প্রার্থীদের আনাধিক ১৮০*১৮০ এবং ২০০ কিলোবাইটের পাসপোর্ট সাইজের ছবি ব্যবহার করতে হবে, ছবি অবশ্যই ১৫ দিনের বেশি পুরনো হওয়া যাবে না।
আবেদন ফি জমা পদ্ধতি
প্রার্থীরা পরীক্ষার আবেদন ফি ট্রাস্ট ব্যাংক মোবাইল মানি কিউ ক্যাশ অথবা টেলিটক প্রিপেইড যেকোনো মোবাইল থেকে sms - এর ৩ তিনটি যে কোন একটি মাধ্যম ব্যবহার করে দিতে পারবেন, তবে মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর পার্থক্য রয়েছে।
প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দান পদ্ধতি
প্রার্থীদের প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা এবং প্রাথমিক ও ইবতেদায়ী শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষার সত্যায়িত কাগজপত্র, পঞ্চম শ্রেণীতে ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষার্থীদের তাদের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের প্রধান কর্তৃক উত্তীর্ণ প্রত্যায়ন পত্র, জন্ম নিবন্ধন বা জন্ম সনদের সত্যায়িত ফটোকপি, প্রার্থীর সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান প্রধান কর্তৃক ষষ্ঠ শ্রেণি সমমান পরীক্ষায় উত্তীর্ণ উল্লেখপূর্বক সনদপত্র, ফলাফল প্রকাশিত না হয়ে থাকলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান প্রধান কর্তৃক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবে এই মর্মে প্রদত্ত সনদ, বাবা-মা বা অভিভাবক মাসিকা এর স্বপক্ষে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রত্যায়ন পত্র, জাতির অভিভাবক বা বাবা-মা ও ভাইয়ের জাতীয় পরিচয়পত্রের সত্যায়িত ফটোকপি, অনলাইনে আবেদন পত্রের আপলোড করা প্রার্থীর ছবির অনুরূপ পাসপোর্ট এবং স্ট্যাম্প সাইজের রঙ্গিন ছবি, সফলভাবে অনলাইনে আবেদনপত্র পূরণ পর উক্ত কাগজপত্র দিয ১৫*১০ ইঞ্চি খামের উপর ইনডেক্স নম্বরঃ ও পরীক্ষা কেন্দ্রের নাম উল্লেখ পূর্বক নির্ধারিত তারিখের মধ্যে প্রার্থীর প্রবেশপত্র উল্লেখিত পরীক্ষাকেন্দ্রে দায়িত্বপ্রাপ্ত ক্যাডেট কলেজের ঠিকানা ডাকযোগে বাহকের মাধ্যমে প্রমাণ করতে হবে।
কোটা সুবিধা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে অবশ্যই ক্যাডেট কলেজ গুলোর আউটলেট মাধ্যমে অনলাইনে আবেদন করতে হবে, সে ক্ষেত্রে কোটাধারীদের তাদের সংশ্লিষ্ট কক্ষে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সহ অন্যান্য কাগজপত্র ও ছবির সঙ্গে আনতে হবে, উল্লেখ্য প্রার্থী ও অভিভাবকদের সুবিধার্থে অনলাইনে আবেদন ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দানের জন্য প্রতিটি ক্যাডেট কলেজ এবং ঢাকা আর্মি স্টেডিয়ামের একটি করে ইবুক আউটলেট স্থাপন করা হয়েছে, এসব উপস্থিত হয়ে অনলাইনে আবেদন, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও আবেদন ফি জমা দেওয়া যাবে।
পরীক্ষার মাধ্যমে
বাংলা ও ইংরেজি, মাধ্যমে পরীক্ষা নেওয়া হয়, তবে প্রার্থীকে যেকোনো একটি মাধ্যম বেছে নিতে হবে।
পরীক্ষা পদ্ধতি
মোট ৩০০ নম্বরের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়, এর মধ্যে প্রাথমিক ধাপ ২০০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষা, ও সুট বিলিটি টেস্টের জন্য ১০০ নম্বর।
লিখিত পরীক্ষার মানবন্টন
বাংলা - ৪০, ইংরেজি -৬৫, গণিত - ৫৫ এবং বিজ্ঞান তথ্যপ্রযুক্তি ও সাধারণ জ্ঞানে - ৪০ , মোট নম্বর -২০০ ভাইবা - ৫০, ও সুট বিলিটি টেস্টের জন্য রয়েছে ৫০ নম্বর।
এছাড়া রয়েছে স্বাস্থ্যগত পরীক্ষা, উল্লেখিত সাপের ভিত্তিতে চূড়ান্তভাবে উত্তর নেতাদের তালিকা প্রকাশ করা হয় ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের মৌখিক পরীক্ষায় এবিলিটি টেস্ট অনুষ্ঠিত হয়।
পরীক্ষার প্রস্তুতি
ক্যাডেট কলেজ ভর্তি পরীক্ষা অন্যান্য পাবলিক পরীক্ষা থেকে বিভিন্ন ধরনের, তাই এ পরীক্ষায় কাঙ্খিত ফলাফল পেতে দরকার দীর্ঘ প্রস্তুতি, অধ্যবসায় ও সঠিক গাইডলাইন, সহায়ক ভূমিকা পালন করে, উল্লেখ্য ক্যাডেট কলেজ ভর্তি পরীক্ষা সংক্রান্ত বিস্তারিত জানতে www.cadetcollege.army.mil.bd ওয়েব সাইটটি ভিজিট করুন, সশস্ত্র বাহিনীতে যোগদানের অগ্রধিকার ক্যাডেট কলেজে পড়াশোনা শেষে ক্যাডেটদের সশস্ত্র বাহিনীর অফিসার পদে নির্বাচনী পরীক্ষায় অগ্রাধিকার দেওয়া হয়, এক্ষেত্রে শুধু ISSB পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত হয়ে সশস্ত্র বাহিনীতে যোগদান করা যায় এবং তা বাধ্যতামূলক ।